জমিয়ে কেনাকাটা জম্মুতে
ট্যুরিস্ট
গন্তব্য হিসাবে জম্মুর গুরুত্ব তেমন কিছু নয়। জম্মুতে দেখার মত কিছুই নেই এমনটা
অবশ্যই নয় তবে যা আছে তা দেখতে ওই বেশ কয়েক লক্ষ ট্যুরিস্ট প্রতি বছর জম্মুতে
বেড়াতে যান না। আসলে জম্মু হল কাশ্মীর উপত্যকা ঢোকার প্রবেশ দ্বার। আপনি যদি
সরাসরি আকাশপথে গিয়ে শ্রীনগরে না নামেন তা হলে আপনাকে তাওয়াই নদীর তীরের এই
শহরটাকে ছুঁয়ে যেতেই হবে। এছাড়াও যেসব যাত্রী শুধু বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে তীর্থ করতে
যান তারাও জম্মুকে ট্রান্জিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যাবহার করেন। সারা বছরই তাই জম্মু
ট্যুরিস্টে গমগম করে। পিক্ সিজিনে হোটেল গুলতে ঘরের অভাবও দেখা দেয়। একাধিক বার
জম্মু ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রথম বার জম্মু পৌঁছে অনেক ভ্রমণার্থীই
বোকা বনে যান। জম্মু-কাশ্মীর কথাটা এক সাথে বলা হয় বটে তবে কাশ্মীরের সাথে জম্মুর
আবহাওয়াগত বিশেষ কোন মিল নেই। শীতে জম্মুতে প্রচণ্ড শীত পড়ে আর গ্রীষ্মে অসহ্য গরম
(তাপমাত্রা 40oC পার করে যায়)। আর কাশ্মীরের
শ্যামলিমাও উধাও জম্মুতে নেমে। কেমন একটা রুক্ষ ভাব জম্মু-কাশ্মীরের এই শীতকালীন
রাজধানীতে। তবে যারা বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন তাদের কাছে জম্মু বেশ
আদর্শ জায়গা। কাশ্মীর দেখে ফিরে জম্মুতে জমিয়ে কেনাকাটা করে চেপে পড়ুন বাড়ি ফেরার
ট্রেনে।
Raghunath Trmple, Jammu |
জম্মুর
প্রধান বাজার হল রঘুনাথ টেম্প্ল মার্কেট। রেলস্টেশন থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার
(বাসে বা অটোতে যাওয়া যায়), আর জম্মু বাস স্ট্যান্ডের একদম গায়েই। কাশ্মীরের
রাজাদের তৈরী রঘুনাথ মন্দিরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বাজার। প্রচুর হোটেলও আছে এই
বাজারের আশে পাশে। ট্যুরিস্টদের থাকার পক্ষেও এই অঞ্চল তাই যথেষ্ট জনপ্রিয়।
কাশ্মীরি শাল, কম্বল, শীত বস্ত্র, কাশ্মীরি কাজ করা ড্রেস মেটিরিয়াল, কাশ্মীরি
সিল্ক, কাশ্মীরি কার্পেট থরে থরে বিক্রি হচ্ছে রঘুনাথ মার্কেট এর দোকান গুলোতে। যে
কোন দোকানে ঢুকলেই ওরা আপনাকে একটা না একটা স্কিমের কথা বলবে। যেমন, ৬৫০০ টাকায় আপনি বিভিন্ন ধরনের ১১টা জিনিষ পাবেন। আপনাকে কেনার সময়েই
পুরো টাকা দিতে হবে না মাত্র ১০০০ টাকা দিয়েই আপনি বুক করতে পারেন। ওরা আপনার বাড়িতে
ক্যুরিয়ারে পাঠিয়ে দেবে, তখন টাকা দিলেই চলবে। ক্যুরিয়ার চার্জও ওরা বহন করবে। এই
বলেই একটা মোটা লাল খাতা বার করে দেখাবে আপনার অঞ্চলের কাকে কাকে ওরা জিনিষ
পাঠিয়েছে। এই ধরনের স্কিমে যেতে পারেন তবে বেশ কিছু জিনিষ আপনার পছন্দ বা প্রয়োজন
নাও হতে পারে। আবার কোন কোন দোকানে কিছু লোক ঠকানো স্কিমও দেখানো হয়। যেমন, আপনি
৬৫০০ টাকায় ১১/১২ টা জিনিষ পাবেন। ওরাই ক্যুরিয়ার চার্জ দিয়ে আপনার বাড়িতে পাঠিয়ে
দেবে। আর ২১ মাস পর ওরা আপনাকে পুরোটাকা ফেরত দেবে বিনিময়ে আপনার কেনা এবং ব্যবহৃত
একটি বিশেষ কম্বল ওরা ফেরত নিয়ে নেবে। শুনতে অবাক লাগলেও আমি একাধিক বার গিয়ে এই ধরনের স্কিমের কথা শুনেছি। কেনাকাটার সময়
নিশ্চয়ই আপনি দোকানদারের কথায় প্রভাবিত হন না, আপনার নিজের বুদ্ধি এবং বিবেচনার
ওপর ভরসা রাখেন। তাহলে কোন চিন্তাই নেই। মনের সুখে কাশ্মীরি শাল, কার্পেট ইত্যাদি
কিনুন; আর ক্যুরিয়ারে নেওয়ার দরকার কি, প্রচুর কেনাকাটা করে লটবহর নিয়ে বেড়িয়ে
ফেরার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে। ও হ্যাঁ, দরাদরি (Bargaining)? অবশ্যই।
জম্মুতে
প্রচুর বিক্রি হয় ড্রাই ফ্রুট্স, আমন্ড, আখরোট, পেস্তা, অ্যাপ্রিকট ইত্যাদি।
দামেও সস্তা। কিনতে পারেন, তবে কেনার আগে খেয়ে দেখে নেবেন। কারন বিভিন্ন দামের এবং
বিভিন্ন কোয়ালিটির জিনিষ পাওয়া যায়। বিশেষ করে আখরোট। জম্মুর বেশ কিছু দোকানে জাফ্রান
(কেশর) বিক্রি হয়। সারা পৃথিবীতে দু’জায়গায় জাফ্রান চাষ হয়, এক স্পেনে আর আমাদের
কাশ্মীরে। এ বিষয়ে বিশেষ পরামর্শ দিতে পারছি না। শুধু এটুকু বলতে পারি
ফেরিওয়ালাদের কাছে একদমই জাফরান কিনবেন না।এসব ছাড়াও আরও একটা জিনিষ পাওয়া যায়,
ক্রিকেটের ব্যাট। লাগলে দরদাম করে কিনে ফেলুন।
কেনার ফাঁকে
দেখে টুক করে দেখে নিন রঘুনাথ টেম্পেল। ক্যামেরা, মোবাইল, ব্যাগ এসব নিয়ে মন্দিরে
ঢোকা নিষেধ। তবে এসব জমা রাখার কাউন্টার
আছে। আর হাতে কিছুটা সময় থাকলে একটা অটো বা গাড়ী চুক্তিতে ভাড়া করে দেখে নিন
জম্মুর অন্যান্য দেখার জায়গা গুলো। বাহু দুর্গ, অমর মহল প্যালেস, ডোগরা আর্ট
মিউজিয়াম ইত্যাদি।
জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে আরো লেখা
No comments:
Post a Comment