Amarnath Yatra is probably the toughest pilgrimage in India. According to Hindu mythology Lord Shiva spoke the secret of immortality to His wife Devi Parvati in a cave of the Himalaya. This cave is now in the state Jammu & Kashmir. People go there from all over the country. The Yatra takes place every year in the months of Jully-August for about one month only. During other time of the year the place remains under the cover of deep snow and almost inaccessible. If you are not a so-called religious people you can join Amarnath Yatra as an adventure, where you can feel the thrill of trekking to an altitude of 14500 feet, face the challenge of ever changing weather and situations. You will be in the midst of nature in such a close proximity where there is nothing man made around you save few tents. But, beware of one thing, Himalaya does not tolerate audacity. You should also show respect to other people's feelings.
অমরনাথের পথে
অচ্যুত সিংহ
এ পারফেক্ট স্কোয়ার। অমরদা, বিজয়, বিমান এবং আমি। চারজনে বেরিয়েছি; লক্ষ্য অমরনাথ গুহা। অনেক পরিকল্পনা, রেজিস্ট্রেশন (জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্কে অমরনাথ যাত্রী হিসাবে যাত্রা পারমিট নেওয়া), কেনাকাটা, গোছগাছ এবং প্রায় দুহাজার কিলোমিটার ক্লান্তিকর ট্রেনযাত্রা শেষ করে অবশেষে আমরা পৌঁছলাম জম্মু স্টেশনে। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। যে ট্রেনে (হিমগিরি এক্সপ্রেস) এসেছি তা হাওড়ায় ছেড়েছিলই চব্বিশ ঘন্টা দেরিতে, অর্থাৎ আমরা আমাদের শিডিউল থেকে আঠাশ ঘন্টা পিছিয়ে। কাশ্মীর এর পরিস্থিতি খুব গোলমেলে। আসার আগে বহুবার টিভিতে দেখিয়েছে কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে। পুলিশ এবং প্যারামিলিটারিদের দিকে আন্দোলনকারীরা পাথর ছুঁড়েছে। আনেক জায়গায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে। বেশ কিছু যুবকের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় গোটা কাশ্মীর জুড়ে কার্ফু। অনেকেই তাই নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল; “কি দরকার বাপু, সুস্থ শরীরকে ব্যাস্ত করে”। তবুও আমরা যাচ্ছি।
|
The Holy Amarnath Cave |
দেবী পার্বতী একবার স্বামী মহাদেবকে চেপে ধরেন অমরত্বের রহস্য জানবেন বলে। এ অতি গুপ্ত রহস্য। যেখানে সেখানে প্রকাশ করা যাবে না। দেবাদিদেব তাই বেছে নিলেন হিমালয়ের এক নির্জন অংশ। তাঁর ত্রিশূলের এক আঘাতে সৃষ্টি হল এক গুহা। লম্বায় ১৬মিটার, প্রস্থে ১৫মিটার আর উচ্চতায় ১১ মিটার। সেই গুহায় বসে মহাদেব দেবী পার্বতীকে বললেন অমরত্বের রহস্য। সেখানে পাহারায় থাকলেন স্বয়ং সিদ্ধিদাতা গনেশ। এত সতর্কতা সত্বেও সে রহস্য শিব গোপন রাখতে পারেননি। আড়ালে থেকে শুনে ফেলেছিল দুটো শুক পাখি। আজও তারা অমর হয়ে রয়ে গেছে সেই গুহায়। অমরত্বের আকাঙ্খা আমার নেই। সাধ শুধু দু’চোখ ভরে হিমালয়কে দেখব।
|
Bhawati Nagar Yatri Niwas, Jammu |
জম্মুর তাপমাত্রা তখন চল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে। বেশ ঘাম হচ্ছে। জম্মু যে এত গরম জানতাম না। স্টেশন থেকে বেরিয়ে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রথমে বাস তারপর অটোতে চেপে পৌঁছলাম ভগবতী নগর। জম্মুতে অমরনাথ যাত্রীদের বেস স্টেশন। জম্মু থেকে অমরনাথ যেতে সরকারি এবং বেসরকারি দুধরনের ব্যবস্থা পাওয়া যায়। আমরা বেছে নিয়েছি সরকারি ব্যাবস্থা, কারন নিরাপত্তা। ভগবতী নগর যাত্রী নিবাসে ঢোকার মুখে পড়তে হল কড়া সিকিউরিটি চেকিং এর মুখে। খানাতল্লাশি হল আমাদের ব্যাগ, শরীর। বাজেয়াপ্ত হল আমার এবং অমরদার সিগারেট ও দেশলাই আর বিমানের মূল্যবান ট্রাভেলিং নাইফ (এটার দুঃখ বিমান ফেরার সময় পর্যন্ত ভুলতে পারেনি। সত্যি খুব সুন্দর আর কাজের ছিল ছুরিটা। ট্রেনেই তার পরিচয় পেয়েছিলাম)। তারপর আরেকবার তল্লাশি এবং লাগেজ স্ক্যান। অবশেষে মিলল প্রবেশের অনুমতি। চুপি চুপি বলে রাখি, এরকম হতে পারে আন্দাজ করেছিলাম। তাই সিগারেটের মশলার পাউচপ্যাক আর সস্তা প্লাস্টিকের লাইটার ব্যাগের জামাকাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলাম। তল্লাশিতে ধরা পড়েনি। বাকি কদিন তা দিয়েই চলেছিল। কিন্তু একি! ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই। গত দুদিন যাত্রা বন্ধ ছিল। যাত্রী নিবাস লোকে উপছে পড়ছে। অনেকেই মাঠে খোলা আকাশের নিচে লোটাকম্বল সহ বিশ্রাম নিচ্ছে। কাল সকালে যাত্রা শুরু হবে। বাসের টিকিট কাটতে হবে এখনই। ধিরে ধিরে ব্যবস্থা হল বাসের টিকিট, ডর্মিটারিতে থাকা, মেঝেয় পেতে শোয়ার জন্য তোষক। বাস ছাড়বে রাত তিনটেয়। যাত্রীনিবাসের যথেষ্ট ভাল কিন্তু ভীষন নোংরা বাথরুম গুলোয় সবাই একে একে স্নান সারলাম। প্রায় দুদিন পর। শরীর কিছুটা জুড়োল। ওখানকার ক্যান্টিনে পয়সা দিয়ে কিনে খাওয়া দাওয়া করলাম। পয়সা দিয়ে কথাটা ইচ্ছে করেই ব্যবহার করলাম, কারন এর পরে অমরনাথের পথে আর কোথাও কিনে কিছু খাইনি।
|
Helipad at Panjtarani |
জম্মু থেকে অমরনাথ যাওয়া যায় দুটো পথ ধরে। প্রথমটা পহল্গাঁও হয়ে চন্দনবাড়ি, সেখান থেকে বত্রিশ কিলোমিটার হাঁটা পথ, দ্বিতীয়টা শ্রীনগর পার হয়ে বালতাল, সেখান থেকে তেরো কিলোমিটার হাঁটা পথ। দ্বিতীয় পথে দূরত্ব অনেক কম, সময়ও লাগে অনেক কম; তবুও আমরা প্রথমটা বেছে নিয়েছি। এপথটাই চিরাচরিত পথ আর শুনেছি এই পথের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য অপরূপ। বেশ কয়েক বছর ধরে পহলগাঁও এবং বালতাল থেকে অমরনাথ এর হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু হয়েছে। আগে হেলিকপ্টার একদম গুহার কাছে গিয়ে নামত, বছর কয়েক আগে একটা অ্যাক্সিডেন্টের পর হেলিকপ্টার সার্ভিস চলে পঞ্জতরনী পর্যন্ত। সেখান থেকে অমরনাথ গুহা প্রায় ছয় কিলোমিটার।
ভোর চারটে। “জয় বাবা বর্ফানি কি! জয়!” আমাদের বাস ছাড়ল পহলগাঁও এর উদ্দেশ্যে। ভোর কথাটা অভ্যাস বশতঃ ব্যবহার করলাম। আসলে রাত। দ্রাঘিমাগত ভাবে জম্মু কলকাতা থেকে অন্তত এক ঘন্টা পিছিয়ে। হেডলাইটের তীব্র আলোয় অন্ধকারকে চিরতে চিরতে পার্কিং গ্রাউন্ড থেকে একে একে বেরোতে থাকল বাসগুলো। সবশুদ্ধ কটা? গুনিনি, তবে সংখ্যাটা একশর কাছা কাছি হবে। আমরা টিকিট পেয়েছি একটা সেমি-ডিলাক্স বাসে, টু বাই টু সীট। বাকি সব ভর্তি হয়ে গিয়েছিল, শুধু এটাই খালি ছিল। বাসের মাঝামাঝি বাঁদিকের একটা সীটে অমরদা ও বিমান, পিছনের সীটে আমি আর বিজয়। রাত্রির জম্মু শহরটাকে একটু দেখব বলে বাসের জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে ছিলাম। দৈত্যাকার সরীসৃপের মত আমাদের মহাকনভয় ধিরে ধিরে এগিয়ে চলেছে। প্রতিটা গলিপথ যা আমাদের রাস্তায় এসে মিশেছে তার মুখ আগলে দাঁড়িয়ে একজন জওয়ান, হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এছাড়াও প্রায় প্রতি একশ হাত অন্তর একজন জওয়ান। জেড প্লাস ক্যাটেগরির ভি.আই.পি. দের ক্ষেত্রে এই ধরনের নিরাপত্তা দেখেছি। প্রতিটি অমরনাথ যাত্রী ভারত সরকারের কাছে এক-একজন ভি.ভি.আই.পি., তাই তাদের জন্য সর্বোচ্চ মানের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। যাত্রা শেষ করা পর্যন্ত এই ধরনের নিরাপত্তাই পেয়েছিলাম। বাসের ঠান্ডা হাওয়ায় চোখ বুজে আসছে। গতকাল রাত্রে ঘুম প্রায় হয়ইনি। শুতে শুতেই এগারোটা পার হয়ে গিয়েছিল। বীভৎস গরম আর ওই অত মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি। রাত্রি একটা নাগাদ একটু তন্দ্রা মত এসেছিল। উঠতে হয়েছে রাত্রি দুটোয়। তারপর কোনমতে নিজেদের তৈরী করে নিয়ে রাত তিনটেয় যাত্রীনিবাসের পাশে বাসের পার্কিং গ্রাউন্ডে। অন্ধকারে বিভিন্ন ধরনের অত গাড়ি আর বাসের মাঝে নিজেদের বাস খুঁজে বার করতেই লেগেছিল মিনিট কুড়ি। তারপর একে একে যাত্রা শুরু।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বাস এক জায়গায় থেমেছে। খুবই ছোট্ট কোন জায়গা। পাহাড়ি অঞ্চল। মোবাইলের টাওয়ার দেখে জায়গাটার নাম জানার চেষ্টা করছিলাম। সিগনাল নেই। জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে নিরাপত্তার কারনে ভারতের অন্য রাজ্যের প্রিপেড মোবাইল কানেক্শন অচল। ট্রেন জম্মু স্টেশনে ঢোকার কিছুক্ষন আগে আমাদের প্রিপেড মোবাইল কানেক্শন গুলো অফ্ হয়ে গিয়েছিলো। অমরদা আর আমি এখানে আসব বলে আলাদা পোস্টপেড কানেক্শন নিয়েছি। বিমান গতকাল রাত্রিতে বি.এস.এন.এল. এর এখানকার প্রিপেড কানেক্শন নিয়েছে। ভগবতী নগর যাত্রী নিবাসে অমরনাথ যাত্রা’র সময় বিএসএনএল এর আস্থায়ী কাউন্টার খোলে। যে রাস্তা দিয়ে আমাদের বাস চলেছে তা শ্রীনগর যাবার রাস্তা। পিরপাঞ্জাল পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে এ রাস্তা শ্রীনগর পৌঁছেছে। একপাশে উঁচু পাহাড় অন্য পাশে গভীর খাদ, মাঝে মাঝেই হেয়ার পিন বেন্ড। খুব সতর্ক হয়ে ড্রাইভ করতে হয়। মাঝে মাঝেই বাসের গতি ভীষন শ্লথ হয়ে পড়ছে। যতদূর জানি স্বাধীনতার আগে কাশ্মীর যাবার মুল রাস্তা ছিল লাহোর হয়ে। এ রাস্তা পরে তৈরী হয়। দূর্গম বানিহাল গিরিপথ পার হতে হয় এ পথে। পরবর্তী কালে জওহর টানেল তৈরী হবার পর এ রাস্তা অনেক সহজ হয়েছে। তবুও এখনও শীতকালে অনেক সময় এ রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। জম্মু থেকে শ্রীনগর ২৯৩ কিলোমিটার রাস্তা। এই রাস্তায় শ্রীনগর পৌঁছনোর ৫০ কিলোমিটার আগে খানাবল, সেখান থেকে ডানদিকে অন্য রাস্তা ধরে আরো ৪৪ কিলোমিটার গেলে পহলগাঁও। আমাদের এখনকার গন্তব্য। যে সব যাত্রী বালতাল হয়ে অমরনাথ যাত্রা করবেন তাদের যেতে হবে শ্রীনগর পেরিয়ে আরো ১১৫ কিলোমিটার। জম্মু থেকে পহলগাঁও যেতে ১০-১২ ঘন্টা লাগে। সেই হিসাবে বিকেল চারটার আগে আশাকরি পৌঁছে যাব। তারপর বিশ্রাম। কাল সকালে প্রকৃতি আর প্যারামিলিটারি অনুমতি দিলে শুরু হবে আমাদের মূল যাত্রা।
মাঝখানে বেলা নটা নাগাদ আমাদের বাস একটা জায়গায় থেমেছিল। নামটা মনে নেই। অমরনাথ যাত্রীদের জন্য খোলা একটা ভাণ্ডারায় ব্রেকফাস্ট করি; রাজমা, ভাত, সব্জী আর একধরনের কচুরী জাতীয় খাবার। তার আগে বাসে বসে খেয়েছিলাম কয়েকটা বিস্কিট। শরীরের মধ্যে একটা অস্বস্তি আছে। কারন যাত্রীনিবাসের অপরিচ্ছন্ন টয়লেট। বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার পাশে আপেল আর নাসপাতির গাছ দেখেছি। অনেক জায়গায় পলিথিনে ভরে নাসপাতি আর আপেল রাস্তার ধারে বিক্রী হচ্ছে। দশ টাকা প্যাকেট। আমাদের বাসেরও কেউ কেউ কিনেছে। একটা নদী এসেছিল বেশ কিছুক্ষনের জন্য আমাদের পাশে। চেনাব; তার সুগভীর খাত, ওই পারের শস্য ক্ষেত, ছোট পাহাড়ী গ্রাম দেখতে দেখতে চলেছিলাম। একটা গঞ্জ মত জায়গা পেরিয়ে এসেছি একটু আগে। বেলা প্রায় সাড়ে বারোটা, রোদ যথেষ্ট চড়া। বাস থেমেছে একটা জঙ্গলের মধ্যে। সামনে বেশ কিছু গাড়ি দেখতে পাচ্ছি। কোন কারনে রাস্তা জ্যাম। এ রাস্তায় অস্বাভাবিক নয়। প্রায় এক ঘন্টা বসে থেকে অবশেষে নামলাম। পাহাড়ি বাঁক আর গাছের ফাঁক দিয়ে যতদূর চোখ যায় শুধু গাড়ী আর গাড়ী; বাস, কার, মিলিটারি, প্যারামিলিটারি অসংখ্য। কারন কিছুই বুঝতে পারছি না, কেউ বলতেও পারছে না। শুরু হল অপেক্ষার পালা। আমার সামনে তখন মিনি ভারতবর্ষ। প্রায় প্রতিটা রাজ্যের নাগরিক প্রচুর সংখ্যায় শ্রীনগরের রাস্তায় আমাদের মতই দাঁড়িয়ে। জল শেষ। বেলা গড়িয়ে এল। রাতটাও বুঝি এখানেই কাটবে। অনেক কসরত করার পর এক ফৌজি গোপন খবর দেবার ভঙ্গিতে জানিয়েছিল, আমাদের আসলে নিরাপত্তার কারনে আটকে রাখা হয়েছে। সামনে কোথাও প্যারামিলিটারির গুলিতে ক্যাজুয়াল্টি ঘটেছে। রাত্রে কোন এক সময় ছাড়া হবে। জলের খোঁজে চললাম। প্রায় দু-কিলোমিটার সামনে হাঁটার পর একটা ছোট্ট পাহাড়ি ঝর্ণা পেলাম। তার পাশেই একটা জায়গাতে খাবার জল পাওয়া গেল। সবাই নিচ্ছে, আমরাও নিলাম। ঘোলা জল। ওখানেই জানলাম আরো দু-আড়াই কিলোমিটার এগিয়ে গেলে একটা ভাণ্ডারা আছে। সেখানে খাবার পাওয়া যাবে। আমাদের কাছে শুকনো খাবার যথেষ্ট থাকায় আর সে ঝক্কিতে যাইনি। সন্ধ্যে নেমেছে, বেশ ঠাণ্ডা। গরম পোষাক পরলাম। বাইরে আর থাকা যাচ্ছেনা। বাসের ভিতরে গিয়ে বসতে হল। রাত্রি সাড়ে ন’টায় ছেড়েছিল বাস আর আমরা পহলগাঁও পৌঁছেছিলাম রাত দু’টোয়। বাইরে তখন ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে।
|
Lidar River, Pahalgam |
|
In our tent. |
অপূর্ব। অসাধারন সুন্দর। চারধারে উঁচু উঁচু কুয়াসা মাখানো পাহাড়। পপলার গাছের সারি। সকাল সাতটায় ঘুমচোখে তাঁবুর বাইরে এসেছি। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মুগ্ধচোখে চেয়ে দেখছি পহলগাঁওকে। আমাদের তাঁবুর একশ হাতের মধ্যে দিয়ে চপলা বিভঙ্গে বয়ে চলেছে অপরূপা লিডার। গতকাল রাত্রে একদফা সিকিউরিটি চেকিং এর পর অমরনাথ বেস ক্যাম্পে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিলাম। তারপর তাঁবুর খোজ। বিস্তর দরাদরির পর তাও পেলাম। এখানে ক্যাম্প খাটের ব্যাবস্থা বা নিচে শোওয়ার ব্যাবস্থা ওয়া্লা তাঁবু পাওয়া যায়। ক্যাম্প খাট গুলো এতই ছোট আর সরু যে ভরসা পাইনি। নিচে শোওয়ার তাঁবুই নিয়েছি। সরকারি একটা রেট আছে, তবে তার উপরেও দরাদরি চলে। বার্গেনিং কাশ্মীরিদের সহজাত। তাঁবুর বিছানাগুলো স্যাঁতস্যাঁতে, ভিজে মাটির উপরে ত্রিপল বিছিয়ে পাতা। দূরে অস্থায়ী টয়লেট; কমোডও আছে। অমরনাথ যাত্রা পরিচালনা করে ‘অমরনাথ শ্রাইন বোর্ড’। তাদের নিয়ন্ত্রনে অমরনাথ যাত্রার সময় বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠে অস্থায়ী যাত্রী-ক্যাম্প। পহলগাঁও এ যাত্রী-শিবির গড়ে ওঠে লিডার নদীর ধারে। কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া। ঢোকার মুখে লাগেজ স্ক্যান, মেটাল ডিটেক্টার পেরিয়ে ঢুকতে হয়। ভেতরে অসংখ্য বেসরকারি তাঁবু। আর আছে বেশ কয়েকটা ভাণ্ডারা। এদের কথা বিশেষ ভাবে বলতে হয়। অমরনাথের যাত্রা পথে বিভিন্ন জায়গায় এরা যাত্রীদের খাবারের ব্যাবস্থা করে, সম্পুর্ন বিনামূল্যে। তীর্থযাত্রীদের সেবাই এদের মূল মন্ত্র। বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এই ভাণ্ডারাগুলো। খোঁজ নিয়ে জেনেছি একটা সিজিনে কুড়ি-পঁচিশ লাখ বা তারো বেশী খরচা হয় একেকটা ভাণ্ডারায়। উত্তর ভারতীয় ও দক্ষিন ভারতীয় দু’ধরনেরই নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়। যথেষ্ট ভালো খাবার। পহলগাঁও যাত্রী-শিবিরে ক্লোক রুমেরও ব্যাবস্থা আছে। চার্জ লাগে ব্যাগ পিছু প্রতিদিন দশটাকা।
|
At the beginig of Yatra, Chandanwari. |
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, রাত্রে বৃষ্টিও হয়েছিল। আজ যাত্রা হবে কিনা বুঝতে পারছিনা। গতকালও হয়নি। আবহাওয়ার উপর অমরনাথ যাত্রা নির্ভরশীল আর হিমালয়ের আবহাওয়া ভীষণ পরিবর্তনশীল। হঠাৎ দশটার সময় মাইকে ঘোষনা হল ‘যাত্রা শুরু হবে, যেসব যাত্রী আজ যাত্রা শুরু করতে চান বেরনোর গেটে লাইনে দাঁড়ান।’ শরীর বেশ ক্লান্ত, পর পর কয়েক রাত ঠিক মত ঘুম হয়নি। তবুও আজই আমরা যাত্রা শুরু করতে চাই। তড়িঘড়ি নিজেদের মালপত্র গুছিয়ে নিলাম। বাড়তি জিনিষ ক্লোক রুমে জমা দিয়ে, ভাণ্ডারায় ব্রেকফাস্ট করে, বিশাল লাইন পেরিয়ে যখন ক্যাম্পের বাইরে এলাম তখন বেলা বারোটা। শেয়ারে একটা টাটাসুমোয় চললাম চন্দনবাড়ি। আগে পহলগাঁও থেকেই হাঁটা শুরু হত। এখন রাস্তা হয়েছে পহলগাঁও থেকে ষোল কিলোমিটার দূরের চন্দনবাড়ি পর্যন্ত। পাকা রাস্তা হলেও বেশ সংকীর্ন পাহাড়ি পথ। সাথে চলেছে লিডার নদী। ভুল করে ক্যামেরাটা ব্যাগে রেখেছি। ব্যাগ টাটা সুমোর ছাদে। অসাধারন দৃশ্যাবলী, ধরে রাখতে না পারায় আফ্শোস হচ্ছিল। চন্দনবাড়ি থেকে অমরনাথ গুহা এই দীর্ঘ ৩৬ কিলোমিটার পথ যাওয়া যায় পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় বা ডান্ডিতে। ডান্ডি হল একটা বসার আসন এর সাথে দুটো ডান্ডা বাঁধা, যা চারজন লোক বয়ে নিয়ে যায়। আর পাওয়া যায় পিট্টু অর্থাৎ মালবাহক। চন্দনবাড়ি তে রাত্রিবাসের ব্যাবস্থা আছে, এর পরের রাত্রি বাসের ব্যাবস্থা বারো কিলোমিটার দূরের শেষনাগে।
|
On the way to Pisu Top. |
|
Pisu Top |
|
Our Pittu |
ঝলমলে রোদ। চন্দনবাড়ির সিকিউরিটি ব্যারিয়ার পার করে আমাদের মুল যাত্রা শুরু করতে করতে ঘড়ির কাঁটা দেড়টা ছুঁই-ছুঁই। একজন পিট্টু ভাড়া করেছি, চারজন চারটে আখরোট কাঠের লাঠি কিনেছি, পাহাড়ে চড়তে যা একান্ত প্রয়োজন। সবাইকার জিনিসপত্র এক জায়গায় করে পিট্টুর কাছে দিয়ে দিয়েছি। সে আগেই রওনা হয়ে গেছে। জলের বোতল, ক্যামেরা আর পোষাক ছাড়া সাথে আর কিছু নেই। পিট্টুর আইডেন্টিটি কার্ড আমার কাছে জমা আছে। এমনিতে আমাদের বাড়তি মালপত্র পহলগাঁওএ রেখে এসেছি। আমাদের সাথে আছে জামাকাপড়, বর্ষাতি, বেশ কিছু শুকনো খাবার, ওষুধপত্র, টর্চ, ক্যামেরা ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় কিছু জিনিষ। সমতলে এসব নিয়ে হাঁটা কোন সমস্যা নয়, কিন্তু পাহাড়ে এক লিটারের জলের বোতল পাথরের চেয়েও ভারি মনে হয়। পিসু টপে চড়ছি। ভয়ঙ্কর চড়াই। টানা তিন কিলোমিটার। পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকে বেঁকে উপরে ওঠা। পায়ে পায়ে তৈরি হওয়া পথ। মাঝে মাঝে কর্দমাক্ত, পিছল। এর মধ্যেই মানুষ পিঠে নিয়ে ঘোড়া যাতায়াত করছে। ঘোড়া এলে পাহাড়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। আমাদের মধ্যে অমরদা বয়স্ক, পঞ্চান্নর আশে পাশে। শরীরও কিছুটা ভারী, হাঁটু এবং কোমরের সমস্যাও আছে। বেশ কষ্ট করে উঠছেন। কষ্ট আমাদেরও হচ্ছে। দম বেরিয়ে যাচ্ছে। রোদ বেশ চড়া। মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিচ্ছি। জল খাচ্ছি অল্প অল্প করে। পাহাড়ে ওঠার সময় অল্প করেই জল খেতে হয়। একসাথে বেশী জল খেলে শরীর ভারি হয়ে যায়, পাহাড়ে চড়তে কষ্ট হয়। গলা শুকিয়ে এলে ক্যান্ডি বা টফি চুষছি। এখানে এসে দেখেছি অচেনা তীর্থযাত্রিরা একে অপরকে ‘ভোলে’ বা ‘জয় ভোলে’ বলে সম্বোধন করেন। ভান্ডারার লোকেরা, ঘোড়াওয়ালা, পিট্টু এরাও তাই বলে; যেমন “ভোলে, পিট্টু চাহিয়ে”। যখন অবশেষে অনেক কষ্টের পর পিসু টপে পৌঁছলাম চারটে বেজে গেছে। এখানে একটা ভাণ্ডারা আছে। ভাণ্ডারায় খাবার খেয়ে অল্প বিশ্রাম করলাম। শরীর খুবই ক্লান্ত। ইচ্ছে করছিল ওখানেই রাতটা কাটাতে, কিন্তু “Miles to go before I sleep.” শেষনাগ এখনো ন’ কিলোমিটার। ভাণ্ডারার লোকেরা আমাদের উৎসাহ দিলে। “ধিরে ধিরে চলতে রহিয়ে ঠিকই পঁহ্চ জায়েঙ্গে”। এটাই পাহাড়ে চলার মুল মন্ত্র।
|
From Pisu Top. |
|
Bunker. |
পিসু টপ থেকে যাত্রা শুরু। চড়াই উৎরাই মেশানো পথ, তবে পিসু টপের মত তীব্র চড়াই আর নেই। বাম দিকে খাড়া পাহাড়। ডান দিকে একটা পাহাড়ি নদী, অনেক নিচে। সম্ভবতঃ ওয়েষ্ট লিডার, শেষনাগে এর উৎপত্তি। বিকেলের পড়ন্ত আলোয় দূরে দু’একটা বরফ ঢাকা চুড়া উঁকি মারছে। ছবি তুলছি প্রত্যেকেই। গতি তাই শ্লথ। প্রায় প্রতিটা উঁচু জায়গায় ভারতীয় জওয়ান, গলায় বাইনোকুলার, হাতে রাইফেল। পাথর সাজিয়ে তৈরি ছোট বাঙ্কারও কয়েকটা দেখেছি, পাশে উঁকি মারছে ওয়্যারলেশ অ্যান্টেনা। আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে জওয়ান, আমরাও হাত নাড়লাম। সুর্য যখন অস্ত গেল পৌঁছলাম একটা সমতল মত জায়গায়, জোজিবাল। একটা ছোট ভান্ডারা, কফি আর বিস্কিট খেলাম। আচমকা তাপমাত্রা অনেকটা কমে গেল। তাড়াতাড়ি জ্যাকেট আর মাঙ্কি-ক্যাপ পরে নিলাম। আবার হাঁটা শুরু। রাস্তা খুবই সরু, পাথুরে; মাঝে মাঝেই পাহাড় থেকে নেমে আসা সরু জলের ধারা। খুব সতর্ক ভাবে হাঁটতে হচ্ছে। পিছলে গেলে ভয়ঙ্কর বিপদ। অন্ধকার নেমে এল। সঙ্গে থাকা টর্চ জ্বালালাম। টর্চের আলোয় কোন উপায়ে পথ খুঁজে চলেছি শরীরটাকে হিঁচড়ে নিয়ে। মাঝে মাঝেই হাঁক মেরে পরস্পরের অবস্থান জানছি। অন্ধকার হিমালয়ের সে এক অন্য রূপ, এক অন্য অনুভুতি; তীব্র ভয় মেশানো। যেন মহানিশায় মহাকালের গর্ভে আমারা কজন পথিক পথ হাতড়াচ্ছি। হঠাৎ দূরে অনেক আলো দেখতে পেলাম। ওটাই শেষনাগ। কত দূরে? পাহাড়ি পথে দূর বোঝা খুব কঠিন। ছোটবেলা থেকেই সে অভিজ্ঞতা আমার আছে। দূর থেকে বেশ কয়েকটা টর্চের আলো আমাদের দিকে আসতে দেখলাম। আলোগুলো কাছে আসার পর বুঝতে পারলাম এরা ভারতীয় জওয়ান। আমাদের মত পিছিয়ে পড়া যাত্রীদের খোঁজে বেরিয়েছে । জিজ্ঞাসা করলাম “কিতনা দূর ভাই?” উত্তর এল ‘আপলোগ পঁহচই গ্যায়ে হ্যাঁয়। সির্ফ দো কিলোমিটার অর বাকি।” পরে বুঝেছিলাম দুরত্বটা ছিল অন্তত ওর দ্বিগুন, জওয়ানরা কমিয়ে বলেছিল, যাতে আমরা ঘাবড়ে না যাই।
আমারদের মত পিছিয়ে পড়া যাত্রী প্রায় পঞ্চাশ-ষাট জন, তার মধ্যে বেশ কিছু মহিলাও আছেন। এরপর ওই জওয়ানরা আমাদের সবাইকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসতে গেলেই জওয়ানরা বারণ করছিল। “বৈঠনা নহী, থক গ্যায়ে তো জোর জোর শ্বাস লিজিয়ে, ফির চলতে রহিয়ে।” তাই করছিলাম। এভাবেই চলতে চলতে পৌঁছলাম শেষনাগের আগে বি.এস.এফ.এর ক্যাম্পে। সেখানে কিছুক্ষন বসে দম নিলাম। জওয়ানরা চা খাওয়াল। তারপর আরো আধ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে পৌঁছলাম শেষনাগ যাত্রী ক্যাম্পে। রাত্রি তখন দশটা পার হয়ে গেছে। কোনউপায়ে একটা তাঁবুর ব্যাবস্থা করে তার মধ্যে ঢুকলাম। এখানে তাঁবুতে কোন আলোর ব্যাবস্থা নেই। তাঁবুওয়ালাকে বলে একটা হ্যারিকেন পাওয়া গেল। ভাণ্ডারায় গিয়ে রাত্রের খাবার খাওয়ার মত অবস্থাও তখন কারো নেই। হ্যারিকেনের আলোয় নিজেদের জিনিসপত্র ঠিক ঠাক করে সাথে থাকা শুকনো খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পড়লাম।
|
View from Seshnag. |
ধ্যানগম্ভীর। কথাটার মানে হিমালয়ে না এলে বোঝা যায় না। সকাল বেলা শেষনাগে তাঁবুর বাইরে এসেছি। গতকাল প্রায় মধ্যরাত্রে যখন শেষনাগে এসেছি কিছুই বুঝতে পারিনি। চারিদিকে বরফ ঢাকা উঁচু উঁচু শিখর। মাঝে একটা ছোট্ট লেক। তার পাড়ে বেশ কয়েকশ তাঁবু। হাল্কা পাহাড়ি কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্য সবে উঁকি দিতে শুরু করেছে। লিখতে খুবই সহজ। কোন বিশেষণ ব্যাবহার করলাম না, কারণ বিশেষণ দিয়ে এ সৌন্দর্য্য বোঝান যাবে না। যে নিজে না দেখেছে এ তার উপলব্ধির বাইরে। কিসের টানে এত কষ্ট স্বীকার করে চলেছি জানি না। শুধু মনে হচ্ছে না এলে এ জীবন অপূর্ণ থেকে যেত। সার্থক জনম আমার।
|
Yatri Camp, Seshnag |
জিনিসপত্র গুছিয়ে, নিজেদের প্রস্তুত করে আবার পথ চলা শুরু। একের পর এক চড়াই। হাঁটছি তো হাঁটছিই। কঠিন পাহাড়ি পথ। আগের দিন কিছু গাছপালা দেখেছি। আজ একটাও চোখে পড়ছে না। কেবল ন্যাড়া পাহাড়। সকালে বিজয় মানসিক ভাবে একটু দূর্বল হয়ে পড়েছিল। চেয়েছিল ফিরে যেতে। তাকে উৎসাহ দিয়ে চাঙ্গা করে নিয়ে এসেছি। একের পর এক চড়াই। উঠছি তো উঠছিই। বেশ রোদ, জ্যাকেটের ভেতরে ঘামছি, কিন্তু জ্যাকেট খুললে ঠান্ডা লাগছে। বিমানের আজ একটু শারীরিক সমস্যা হচ্ছে, মাথায় যন্ত্রনা। মাঝে উপরদিকে তাকাচ্ছিলাম, আরও কত উপরে উঠতে হবে, এক জওয়ান তা দেখতে পেয়ে বলল “ভোলে, উপর মৎ দেখিয়ে, নিচে দেখিয়ে, আপা কাঁহাসে আয়ে হো- উপর চড়না তব আসান হো জায়েগা।” ফিলোজফিটা মন্দ নয়। তাই করলাম, নিচে অনেক নিচে মানুষ কেমন পিঁপড়ের মত দেখাচ্ছে। ওখান দিয়েই কিছুক্ষন আগে আমরা এসেছি। এখানে অক্সিজেনের মাত্রা কম, উঠতে ভীষন দম লাগছে। কাপড়ের মধ্যে কর্পূর ভরে পুঁটলি বানিয়ে এনেছি, নাকের কাছে তা এনে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। এটা একটা অতি প্রচলিত টোটকা, এতে নাকি শ্বাসকষ্ট কমে। আজ আমরা পেরোব মহাগুনাস পাস, ১৪৫০০ ফুট উচ্চতা। এটাই অমরনাথ যাত্রার সবচেয়ে উঁচু অংশ। এখানে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে তুষার ঝড় হয়। অনেকটা চড়াইয়ের পর অল্প একটু উৎরাই পেরিয়ে একটা সমতল জায়গায় এসে পড়লাম। একটা ভাণ্ডারা। এখানেই দুপুরের খাবার খেলাম। বেশ খানিক্ষন বিশ্রাম নিলাম। আবার চড়াইএ উঠা শুরু। মহাগুনাস পাসের সর্বোচ্চ অংশ, স্থানীয় মানুষরা একে বলে গনেশ টপ। শিব অমরত্বের রহস্য বলার সময় এখানেই সিদ্ধিদাতা গনেশ পাহারা দিচ্ছিলেন। অমরদা কিছুটা অসুস্থ। একটা মেডিক্যাল ক্যাম্প আছে গনেশ টপে। সেখানে অমরদাকে অক্সিজেন দেওয়ানো হল। হরিয়ানভি ডাক্তার জানালেন ‘আপনারা সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে গেছেন, এরপর আর চড়াই নেই শুধু উৎরাই।”
|
On a glacier. |
|
Bhandara at Poushpatri. |
|
Temporary stalls in front of the Holy Cave. |
গনেশ টপে বিশ্রাম নিয়ে, বি.এস.এফ.এর ডাক্তার এর সাথে অনেক্ষন গল্প করে আবার যাত্রা শুরু। একের পর এক উৎরাই। একেকটা উৎরাই নামছি আর বিমান বলছে ফেরার সময় এগুলো সব চড়তে হবে। মাথার উপর রোদ ঝলমলে আকাশ। এই জায়গাটার নাম বোধহয় ওয়াবযান। পরপর বেশ কয়েকটা হিমবাহ পেরোতে হচ্ছে। শক্ত বরফের উপর দিয়ে খুব সতর্কভাবে লাঠি ঠুকে ঠুকে হাঁটছি। অসাবধান হলেই পড়ে যাব। শক্ত বরফ ভীষণ পিছল। হিমবাহ গলে একটা নদীর জন্ম হচ্ছে। পরে এই নদীর কি নাম হয়েছে জানিনা। হিমবাহের উপর দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম। সানগ্লাস খুলতেই চোখ ঝলসে গেল। বরফের উপর সুর্যের আলো পড়ছে। হিমবাহ গুলো পার করে হাঁটছি, চড়াই উৎরাই বিশেষ নেই। একটা ভান্ডারা পড়ল। জায়গাটার নাম পৌষপত্রি। রঙ্গীন ফাইবার গ্লাসে ছাওয়া একটা হ্যাঙ্গার। তার মধ্যে ভান্ডারা। বহু ধরনের খাবার, এমনকি ফুচকাও আছে। অল্প কিছু খাবার খেলাম তারপর আবার পথ চলা। হাঁটতে হাঁটতে যখন পঞ্জতরণী পৌঁছলাম তখন বেলা পড়ে এসেছে। চারিদিকে পাহাড়ের মাঝখানে একটা নদীর ধারে যাত্রিনিবাসের কয়েকশ তাঁবু। একটা হেলিপ্যাড আছে, পহলগাঁও ও বালতাল থেকে অমরনাথের হেলিকপ্টার সার্ভিস পঞ্জতরণী পর্যন্ত আসে। একটা তাঁবুর ব্যাবস্থা করে তার ভিতরে ঢুকলাম। একেটা তাঁবুতে দশজন করে থাকার ব্যাবস্থা। মাথাপিছু হিসাবে থাকা যায় তবে সেক্ষেত্রে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সব জায়গাতেই আমারা তাই পুরো তাঁবু ভাড়া করেছি। এতে একটু বেশী আরাম মেলে, কম্বলও বেশী পাওয়া যায়। জ্যাকেট, গ্লাভস, টুপি সবকিছু পরেই রাত্রে শুতাম। তাঁবুতে ঢুকে জিনিষ পত্র রেখে বসার কিছুক্ষন পরে হঠাৎ ভীষণ শীত করতে লাগল, সঙ্গে প্রবল কাঁপুনি। গোটা তিন চার কম্বলেও সে কাঁপুনি থামছে না। প্রথমটায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, পরে মনে হল শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেছে, সারাদিনে জল প্রায় খাইইনি। জল খুবই ঠান্ডা বলে খাওয়া কষ্টকর। তাড়াতাড়ি বিজয় একবোতল গরম জল কিনে আনল, তাতে এক প্যাকেট ইলেক্ট্রাল পাওডার গুলে ধীরে ধীরে খেলাম। আস্তে আস্তে কাঁপুনি কমল। ঘুমিয়ে পড়লাম।
|
My three companions in front of the Holy Cave. |
|
In front of the Holy Cave. |
যতদূর জানি আচার্য্য শঙ্কর প্রচলন করেছিলেন অমরনাথ যাত্রার। তারপর বেশ কয়েক শতাব্দী অমরনাথ গুহার খবর কেউ রাখেনি। পরবর্তিকালে আক্রম বাট নামে একজন মুসলিম মেষপালক অমরনাথ গুহার খোঁজ পান। তার পর থেকে আধুনিক অমরনাথ যাত্রার শুরু। জুলাই-আগস্ট মাসে এক মাস ধরে হয় অমরনাথ যাত্রা। শুরু হয় পহলগাঁও থেকে অমরনাথ ছড়ি মিছিলের মাধ্যমে। জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সারা ভারতবর্ষের এক অদ্ভুত পথ চলা এই অমরনাথ যাত্রা। এখানে যারা তাঁবু বসায়, মালপত্র বহন করে, ঘোড়া চালায় সবাই মুসলিম। এমনকি অমরনাথ গুহার সামনে যাদের কাছে পূজার সামগ্রী কিনে লোকেরা অমরনাথের দর্শন করতে যায় তারাও মুসলিম। এরা বছরের বাকি সময় চাষবাস করে আর অমরনাথ যাত্রার মাস দেড়েক অমরনাথ যাত্রীদের সেবা করে কিছু বাড়তি টাকা রোজগার করে। বাবা অমরনাথের প্রতি এদের শ্রদ্ধাও দেখেছি। পথের উপর পড়ে থাকা ভগবান শিবের ছবিওয়ালা খালি ধুপের প্যাকেট শ্রদ্ধা ভরে মাথায় ঠেকিয়ে সরিয়ে রাখতে দেখেছি। সারা ভারত থেকে ধনী–দরিদ্র, ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল, সমর্থ-পঙ্গু, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সব ধরনের মানুষই আসে এখানে। জিন্স পরা তন্বী আধুনিকাকে যেমন দেখেছি তেমনি পৃথুলা বৃদ্ধাকেও দেখেছি ডান্ডি চড়ে অমরনাথ দর্শনে যেতে। বেশ কিছু প্রতিবন্ধী মানুষকে দেখেছি এমনকি একজনকে যিনি চার হাত পায়ে কোন উপায়ে হাঁটেন। অত উপরে তিনি কিভাবে উঠলেন ভেবে বিস্মিত না হয়ে পারিনি। বহু মানুষকে দেখেছি যাদের উপযুক্ত শীত বস্ত্রটুকুও নেই। প্রথমে ভেবেছি রাতে এরা কোথায় থাকেন, কারন তাঁবুর ভাড়া দেওয়ার পয়সা এদের নেই। পরে জেনেছি ভান্ডারা গুলোতে রাত্রে এদের থাকতে দেওয়া হয়, বিনাপয়সায় কম্বলও দেওয়া হয় শোবার জন্য।
|
Inside of the Holy Cave in a zoom shot. |
আজ আমাদের অমরনাথ দর্শন। সকাল প্রায় আটটা। বেশীরভাগ যাত্রীই বেরিয়ে গেছেন। বাকি আমাদের মত কিছু মানুষ। সকালে ভেবে ছিলাম স্নান করবো, গরম জল কিনে, চল্লিশটাকা বালতি। পরে সে ইচ্ছা ত্যাগ করি। শরীর সবাইকারই ভালো নেই। যাত্রার শুরুতে পরিকল্পনা ছিল হেঁটে পহলগাঁও ফিরব। শেষনাগে বসে ঠিক করেছিলাম অমরনাথ দর্শন করে হেঁটে বালতাল চলে যাব, সেখান থেকে বাসে পহলগাঁও। পহলগাঁও আমাদের ফিরতেই হবে কারন ওখানে আমাদের মালপত্র রাখা আছে। পঞ্জতরণীতে এসে দেখলাম হেলিকপ্টারের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে তাই ঠিক হয়েছে হেলিকপ্টারে পহলগাঁও ফিরব। সকালে অল্প খাওয়া দাওয়া করে আমাদের যাত্রা শুরু হল। পিট্টু আগেই রওয়ানা হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে শুরু হল চড়াই। পাহাড়ের গা বেয়ে সরু পথ। বাঁদিকে একটা নদী। যে নদীর পাশে পঞ্জতরণীর যাত্রী ক্যাম্প। পাহাড়ের মাঝ খান দিয়ে নদীর খাত বরাবর উড়ে যাচ্ছে হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার গুলো উড়ছে আমাদের চেয়ে নিচুতে। এ অভিজ্ঞতা এই প্রথম। আজ হাঁটতে আগের দিনের চেয়ে কম কষ্ট হচ্ছে। আসলে উচ্চতার সাথে শরীর ধিরে ধিরে খাপ খাইয়ে নেয়। তাই যারা পর্বতারোহী তারা একটানা ওঠেন না, হাজার দুয়েক ফিট উঠে এক দুদিন থেকে আবার ওঠেন। আমাদের কপাল ভাল, একবারও বৃষ্টি পাইনি। এই পাহাড়ে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটা ভীষন কষ্টকর। একজন বাঙালি বি.এস.এফ. জওয়ানের সাথে পরিচয় হল। কিছুক্ষন গল্প করলাম তার সাথে। তারপর আবার হাঁটা শুরু। উলটো দিকের পাহাড়ের ঢালে অনেক ভেঁড়া চরছে দেখতে পাচ্ছি। সাথে মানুষও আছে। এদের বলে গুর্জ্জর, মেষপালনই এদের জীবিকা। এই অঞ্চল বছরে সাত আট মাস পুরোপুরি বরফে ঢাকা থাকে। কোন জন মানুষ আসে না। বাকি কয়েকটা মাস গুর্জ্জররা আসে। কিন্তু ওরা এখানে থাকে কি করে বুঝতে পারলামা না। যদিও ক্যামেরার লেন্সের মধ্য দিয়ে পাথর সাজিয়ে তৈরি একটা কুঁড়ে মত দেখতে পাচ্ছিলাম। আমাদের পাশদিয়ে বয়ে চলা নদীর সাথে আরেকটা নদী এসে মিসেছে। উল্টো দিকের পাহাড়ের গা বেয়ে বহু মানুষ আসছে। ওটাই বালতাল যাবার রাস্তা। এই জায়গাটার নাম সঙ্গম। এবার উৎরাই শুরু। যেতে যেতে অমরনাথ গুহা দৃশ্যমান হয়ে উঠল। শুরু হল বরফে ঢাকা পথ। একটা নদী জমে পুরো বরফ হয়ে গেছে, অথবা এটাই সেই হিমবাহ যেখান থেকে নদীর জন্ম। নদীর নাম অমরগঙ্গা। নদী পার হয়ে আমাদের ওপারে যেতে হবে। একটা ছোট্ট ব্রিজ মত আছে তার পাশেই কয়েকটা চট দিয়ে ঘেরা অস্থায়ী স্নানের জায়গা। স্নানের গরম জলও বিক্রি হচ্ছে। অনেকে স্নানও করছেন। অমরগঙ্গার হিমশীতল জল মাথায় ঠেকিয়ে নদী পার হলাম। বরফের ওপর দিয়ে পায়ে চলা পথ। দুপাশে তাঁবু, অস্থায়ী দোকান। সবই বরফের ওপর। পূজার অর্ঘ্য কিনলাম, কিছু শুকনো মুড়ি কয়েকটা শুকনো ফল ইত্যাদি। অমরনাথে পূজার কোন ব্যবস্থা নেই। কোন পুরোহিতও নেই। ভক্তি ভরে অর্ঘ্য দিলেই হল। আসলে এত কষ্ট স্বীকার করে অমরনাথে আসতে পারাটাই সর্বশ্রেষ্ঠ পূজা। আস্তে আস্তে চলেছি। চোখের সামনে গুহামুখ একদম স্পষ্ট। থমকে দাঁড়াতে হল। তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা, সরু গেট, মেটাল ডিটেক্টার ফ্রেমের মধ্য দিয়ে। সামনে সাইনবোর্ড- ক্যামেরা, মোবাইল, ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া নিষেধ। ওসব আবার রাখব কোথায়? পাহারায় থাকা প্যারামিলিটারি জওয়ানের কাছে জানলাম পাসের দোকানে নিজের দায়িত্বে রেখে যাওয়া যাবে। অগত্যা তাই করতে হল। গুহার ভেতরের ছবি তুলতে পারবোনা- এই ভেবে মনটা খারাপ লাগছিল। কয়েকশ সিঁড়ি। আস্তে আস্তে উঠছি। পাহাড়ের চড়াইএ ওঠার চেয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা কষ্টকর। পায়ের পেশীতে টান ধরে যায়। একধারে একটা মেডিক্যাল ক্যাম্প। প্রায় গুহার কাছে জুতো রাখার জায়গা। চারিদিকে প্যারামিলিটারির কড়া পাহারা। বেশ কয়েকজন মহিলা জওয়ানও আছে। জুতো জমা রেখে গুহায় ঢুকলাম। বিশাল প্রাকৃতিক গুহার শেষপ্রান্তে বরফের শিবলিঙ্গ, ফুটদেড়েক উচ্চতা। সামনে লোহার রেলিং। আমরনাথ যাত্রার শুরুতে এই শিবলিঙ্গের উচ্চতা থাকে প্রায় বারো-চোদ্দ ফুট, ধিরে ধিরে গলতে গলতে তা এখন দেড় ফুটে দাঁড়িয়েছে। পায়ের নিচে বরফঠান্ডা জলের পাতলা আস্তরন। পাশে দাঁড়িয়ে অটোমেটিক রাইফেলধারী জওয়ান, পুরুষ এবং মহিলা। তাদের পায়ে জুতো। এই ঠান্ডায় খালি পায়ে বেশীক্ষন থাকা সম্ভব নয়। অর্ঘ্য নিবেদন করে হাতজোড় করে দাঁড়ালাম। কি চাইব? বুঝতে পারছি না। চোখ বন্ধ করে সেই দৃশ্যটা ভিসুয়ালাইজ করার চেষ্টা করছি। আমার সামনে দেবাদিদেব মহাদেব দেবী পার্বতীকে অমরত্বের গুপ্তরহস্য বলছেন। কতক্ষণ চোখ বন্ধ করেছিলাম জানিনা। হুঁশ ফিরল ডানা ঝাপ্টানোর শব্দে। দুটো পায়রা। এরাই কি সেই দুটো শুক পাখি, যারা অমরত্বের রহস্য শুনে ফেলেছিল। মনে হয় এরা তাদের বংশধর। অমরত্বের রহস্য যেন আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে এল। সব কিছুই লিটার্যালি ধরতে হবে কেন? মানুষ মরেও অমর হয়ে থাকে তাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য দিয়ে, তা জেনেটিক্যালি হোক বা ইমোশনালি। ভাবলাম ঈশ্বর পাটনির সেই বিখ্যাত চাওয়াটাই চাই, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।” পাশ থেকে কানে এল “সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়ঃ....”। তাকিয়ে দেখি এক সন্ন্যাসী। কিছুই চাওয়া আর হল না। মনে এক অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে ধীর পায়ে গুহার বাইরে এলাম। এবার ফেরার পালা।
|
Baltal Yatri Camp. |
অমরনাথ দর্শন করে ফিরে এসেছিলাম পঞ্জতরণীতে। হেলিকপ্টারে পহলগাঁও যাবার টিকিট কেনা; তারপরেই বিপত্তি। শেষনাগে আবহাওয়া খারাপ থাকায় পহলগাঁও এর উড়ান বন্ধ। মোট তিনদিন থাকতে হয়েছিল পঞ্জতরণীতে। হেলিপ্যাডে অপেক্ষা করে আর কাশ্মীরি তাঁবুওয়ালাদের সাথে গল্প করে সময় কাটাচ্ছিলাম। টিকিট ক্যান্সেল করব তার উপায় নেই; হেলিকপ্টার কোম্পানী টাকা ফেরত দেবে পহলগাঁওএ। আমাদের কাছে বাড়তি অত নগদ টাকা নেই যা দিয়ে বালতালের টিকিট কিনব। এখানে এ.টি.এম. এর কোন সুবিধা নেই। বিরক্তির চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছনোর পর অমরদা ঝগড়া করে বালতালের হেলিকপ্টার কোম্পানীর সাথে দুটো টিকিট এক্সচেঞ্জের ব্যাবস্থা করে। কিছু বাড়তি টাকা দিয়ে হেলিকপ্টারে বালতাল যাওয়ার ব্যাবস্থা হয়। পঞ্জতরণী থেকে মাত্র আট মিনিটের উড়ানে বালতাল পোঁছাই পহলগাঁও থেকে যাত্রা শুরু করার পঞ্চম দিনের বিকেলে। সেরাত্রেও বালতালে আটকে থাকতে হয়েছিল। পরেরদিন ভোর চারটের সময় পহলগাঁও এর উদ্দেশ্যে আমাদের বাস ছেড়েছিল এক বিরাট কনভয়ের সাথে। কার্ফু কবলিত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে আমাদের কনভয় ছুটেছিল। কোন লোকালয়ে বাস থামানোর অনুমতি মেলেনি, শ্রীনগর শহর যখন পার হচ্ছি রাস্তা জনমানব শূন্য। জম্মুর গাড়ি গুলো যেতে পারলেও পহলগাঁও এর গাড়িগুলো আটকে দেওয়া হয়েছিল অনন্তনাগে নিয়ে গিয়ে। এফ.সি.আই. এর একটা গোডাউন এ সারাদিন সি.আর.পি.এফ. এর সম্মানিত বন্দী হয়ে কাটিয়েছিলাম। কারন সিকিউরিটি অ্যারেঞ্জমেন্ট নেই। খাওয়াদাওয়া হয়েছিল গোডাউন কমপ্লেক্সের ভেতরে এক ভাণ্ডারায়। সম্মানিত বন্দী, কারন বাইরে বেরনোর অনুমতি ছিল না। এমনকি বাইরে উঁকি ঝুঁকি মারতেও দেয়নি। রাত্রে জম্মু থেকে আসা কনভয়ের সাথে আমাদের পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল পহলগাঁওএ। পুরো একটা দিন পহলগাঁওএ কাটিয়ে পরের রাত্রে সারারাত বাসজার্নি করে পৌঁছেছিলাম জম্মু। শেষ হয়েছিল আমাদের অমরনাথ অভিযান।
Congrats. It is worth reading. Mentioning the dates could have made it picture perfect. However, the endeavour is courageous.
ReplyDeleteIt is really wonderful for me to comment on it as the first reader. Hope others will not lag behind.
Best wishes.
It seems, I myself have reached the land of Lord Shiva, Amarnath, whilst reading this beautiful travelogue. Thanks to the writer for sharing this with us.
ReplyDeleteWonderful information thak you my dear for sharing, Amarnath is one of the sacred place and most of devotes Book Amarnath Yatra tour packages and visit this amaranth cave and discover the beauty of Kashmir . Amarnath Yatra 2013is an ultimate opportunity to visit Kashmir paradise.
ReplyDelete