এবার
শীতে চলুন নতুন পথে - অন্ধ্রের অল্প জানা
ক’টি জায়গা
পাখিমন রায়
আরাকু, হায়দ্রাবাদ তো অনেক ঘুরলেন।
এবার যদি একটু অন্য দিকে চোখ ফেরাতে চান তবে চলুন এক নতুন পথে- বিজয় ওয়াড়া -উন্ডাভাল্লী কেভ – অমরাবতী -
নাগারজুনকন্ডা – অনুপু – ইথিপথালা – সূর্যলঙ্কা বীচ। প্রকৃতি, ইতিহাস, পুরান, প্রযুক্তি ও তীর্থ ক্ষেত্রের এক
অসামান্য সমন্বিত ভ্রমন পথ। চলুন শুরু করি পথ চলা।
নাগারজুন সাগর বাঁধ
|
বিজয়ওয়াড়াঃ (Vijayawada)
স্থানীয়
লোকের কাছে Venice of India. কৃষ্ণা নদীতীরের এই শহরটি বিশালাকায়
প্রকাশম ব্যারাজ, কৃষ্ণা নদী ও অজস্র খাল বা ক্যানালের কাটাকুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
যাওয়াঃ কলকাতা থেকে
-------------।
দ্রষ্টব্যঃ ইন্দ্রকিলাদ্রি পাহাড়ের
উপর বিখ্যাত কনক দুর্গা মন্দির, কথিত আছে মহাভারতে অর্জুন পাশুপত অস্ত্র পাওয়ার পর
এই দেবীর প্রতিষ্ঠা করেন (দশেরা উৎসব বিশেষ)। গান্ধী হিল – পাহাড়ের উপর গাড়ি চলে
যায়। চাইলে হেঁটেও উঠতে পারেন। পাহাড়ের গা দিয়ে সুন্দর বাঁধানো পথ চলে গেছে উপর
পর্যন্ত। ভিক্টোরিয়া মিউজিয়াম, রাজীব গান্ধী পার্ক, টয় ট্রেন ইত্যাদি নিয়ে সুন্দর
বিকাল কাটানোর জায়গা। হজরত বাল মসজিদ, বলা হয় হজরত মহম্মদের রেলিক্স আছে। আর আছে গুনাদালা
মেরী মাতা চার্চ। তিন ধর্মের সুন্দর সহাবস্থান চোখে পড়বে। আর একটি সুন্দর জায়গা হল
কৃষ্ণা নদীর ভিতর ভবানী দ্বীপ। রিভার ক্রুইজের ব্যাবস্থা আছে।
থাকাঃ গোটা শহর জুড়ে প্রচুর
হোটেল। নিজেরা ঘুরে দেখে দরদাম করে থাকতে পারবেন। তবে উৎসবের সময় গেলে আগে বুক করে
যাওয়াই ভাল। সবথেকে ভাল থাকার জায়গা হল এপিটিডিসির ভবানী আইল্যান্ডের হরিতা
রিসোর্ট। এছাড়া বাম পার্ক (Barm Park) রিসোর্ট। দাম শহরের হোটেলের মতই। কিন্তু স্থান গুনে মন ভোলানো।
সকালে নেমে হোটেলে উঠে ফ্রেশ
হয়ে সারাদিন ঘুরুন। একদিন যথেষ্ট। সময় পেলে আর একদিন থাকতে পারেন।
উন্ডাভাল্লী- কোন্ডাপল্লী – অমরাবতীঃ (Undavalli-Kondapalli-Amaravati)
উণ্ডাভল্লী কেভ্স
|
আগের দিনের দরদাম করে ঠিক করা গাড়িতে সকাল বেলা বেরিয়ে পড়ুন। হোটেলে ব্রেকফাস্ট দিতে দেরি করলে রাস্তায় কোন চালু হোটেলে নির্ভেজাল অন্ধ্র জলখাবারের স্বাদ নিন। প্রথম চলুন (৮কিমি) উন্ডাভাল্লী। এটি একটি ষষ্ঠ শতাব্দীর বৌদ্ধ কেভ টেম্পল। গুপ্ত যুগের নিদর্শন পাওয়া যাবে। গুহা স্তাপত্যের তিনতলায় একটি শায়িত বুদ্ধ মূর্তি আছে যা একটি মাত্র গ্রানাইট শিলা কেটে তৈরি। ASI এর তত্বাবধানে সুন্দর সাজান এক ঐতিহাসিক মানস যাত্রা সারুন। প্রচুর শিলালিপি দেখতে পাবেন, যা আপনার সাথে থাকা স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের ভাল লাগার জিনিস হবে। এখান থেকে যান মোঘল রাজা পুরম কেভস। এটি চতুর্থ- পঞ্চম শতাব্দীতে সৃষ্ট একটি স্থান। এটি দেখে চলুন কোন্ডাপল্লী। ২০কিমি বিজয়ওয়াড়া থেকে। প্রথম পথ নিয়ে যাবে অনেকগুলি পাহাড়ের উপর। তারপর ঘুরে ঘুরে নামবেন উপত্যকায়। প্রাচীন কেল্লাটি উপর থেকে দেখতে ভাল লাগবে। কেল্লা ঘুরে চলুন কোন্ডাপল্লী গ্রাম দেখতে। বিখ্যাত
কোণ্ডাপল্লীর কাঠের পুতুল |
অমরাবতীর বুদ্ধ মুর্তি।
|
অজান্তে খারাপ বা অন্য জিনিস দিয়ে দেবার রেওয়াজটি ভালোই চালু আছে। বিদেশে প্রচুর চালান হয় এই পুতুল। রাস্তায় কুচিপুড়ী নৃত্যশালা আছে। উৎসাহীরা যেতে পারেন। এরপর চলুন অমরাবতী। ৬০কিমি বিজয়ওয়াড়া থেকে। এখানে খ্রিস্ট পূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর চিন্তাপল্লী বৌদ্ধ স্তূপ ছিল। বলা হয়ে থাকে এই স্তূপটি সাঁচির থেকেও বড় ছিল। সম্রাট অশোকের সময়কার কিছু রেলিক্স এখানে পাওয়া গেছে। এটিকে কেন্দ্র করে বিশাল একটি মন্দির হয়েছে এবং হচ্ছে। কারুকার্য, দেওয়ালের ভাস্কর্য নিঁখুত সুন্দর, অপরূপ। শোনা গেল গোটা পৃথিবী থেকে ভক্ত সম্প্রদায় এর দায় নিয়েছে। পন একে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শ্রাইন বানাবার। পৃথিবী শ্রেষ্ঠ কিনা বা কি তা ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিয়ে আসুন এর অনুপম সৌন্দর্য পান করা যাক। এই বছর পুরো তৈরি যদি না হয়ে থাকে তাহলে বলব পর্যটকের উপরি পাওনা। তৈরি প্রক্রিয়া
কুচিপুড়ী নৃত্যশালাঃ চাইলে বা
উৎসাহ থাকলে দক্ষিন ভারতের অন্যতম ক্ল্যাসিকাল ডান্স বা নৃত্যশৈলী কুচিপুড়ীর শিক্ষায়তন
দেখতে পারেন। বিজয়ওয়াড়া থেকে ৬০কিমি দূরে।
ইথিপথালা বা
এথিপথালা ও অনুপুঃ (
Ethipothala and Anupu ) অমরাবতী থেকে আসুন অনুপু। এটি
আসার জন্য নাগারজুন সাগর ও এথিপথালা পেরিয়েই আসতে হবে। কিন্তু এই ট্যুর প্ল্যানে
আগে এখানে যেতে বলার কারন হল রাত্রিযাপনের সুবিধা। যারা চাইবেন তারা নাগারজুন
সাগরেও রাত কাটাতে পারেন। নাগারজুন > এথিপথালা ৭কিমি এবং এথিপথালা > অনুপু
৮কিমি। আমাদের এই প্ল্যান অনুযায়ী এবং শীতের বেড়ানো ধরে নিলে অনুপু পৌঁছাবেন
সূর্যাস্তের কাছাকাছি সময়ে। এটি একটি মুক্তাঙ্গন (open air amphitheatre) ও বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ। পাহাড়ের
উপরে অবস্থিত। নিচের উপত্যকায় বহমান কৃষ্ণা নদী, পাহাড়, সূর্যাস্ত কে একসাথে নিয়ে
যাত্রা করুন অতীত ইত্তিহাসের পথে। অ্যাম্ফি থিয়েটারের গঠন শৈলী অবাক করবে। এবার
ফিরে চলুন এথিপথালা।
থাকাঃ এখানে এপিটিডিসির (A.P.T.D.C.) রিসোর্টটি স্থান গুনে অনন্য। এবং নাগারজুনের থেকে
প্রায় অর্ধেক দাম ও দ্বিগুন নির্জনতা। নাগারজুনে রাত না কাটাতে বলার উদ্দেশ্য
এটাই। চারটি ঘরের একটি অনবদ্য কটেজ কমপ্লেক্স। চারপাশে আমবাগান। বিস্তীর্ণ
প্রান্তর পেরিয়ে রেলিং ঘেরা ভিউ পয়েন্ট। যেখানে দাঁড়ালে নিচে আলোক মালায় সজ্জিত
ফলস। রাতের আলোকসজ্জায় দেখুন বা পূর্ণিমা রাত্রে আলো নিভিয়ে দেখুন (কেয়ার টেকারকে
বললে পূর্ণিমা রাতে সব আলো নিভিয়ে দেবে) এক মোহময় অভিজ্ঞতার স্বাদ পাবেন।
7 |
ঘুরতে পারেন। তবে সাবধানে।
এথিপথালার জলপ্রপাত
|
নাগারজুনকন্ডাঃ ( Nagarjunakonda ) তারপর বেরিয়ে পড়ুন নাগারজুন কন্ডার দিকে। কন্ডা অর্থ পাহাড়। নাগারজুন শূন্যতা বা void এর ধারনা দেন প্রথম। তাই প্রাচীন ভারতীয় মনিষীদের মধ্যে ইনি আজও স্মরণীয়। এখানে নাগারজুনের সমসাময়িক স্তাপত্য সভ্যতার অনুপম ও প্রাসঙ্গিক বহু নিদর্শনের জায়গা। কিন্তু ৬০এর দশকে কৃষ্ণা নদীতে বাঁধ দিয়ে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম (manmade lake) ড্যাম নাগারজুন সাগর তৈরি করার সময় ভারতের অন্যতম ঐতিহাসিক অঘটন টি এখানেই ঘটে। সমস্ত প্রাচিন ধ্বংসাবশেষ এর সলিল সমাধি ঘটে। বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়। পরে ASI বহু যত্নে জলের তলায় থাকা ঐতিহাসিক নিদর্শন তুলে আনে এবং নাগারজুন পাহাড়ের উচ্চতম স্থানে নতুন করে মিউজিয়াম ও প্রাচীন স্তূপের একটি সুন্দর রেপ্লিকা তৈরি করে। এগুলি দেখে চলুন ড্যাম ঘুরতে। সুন্দর লঞ্চ রাইডের ব্যাবস্থা আছে। পাহাড় ঘেরা ড্যামটি ঘুরতে খুব ভাল লাগবে। দ্বিপ্রাহরিক আহার সারুন এপিটিডিসির হোটেলে।
এখান
থেকে হায়দ্রাবাদ শহর ১৫০কিমি। ওখানে ফিরে ভ্রমন সমাপ্ত করতে পারেন। নাহলে এই
প্রতিবেদকের যাত্রাপথ অনুসারে গুন্তুর জেলার আর একটি বিখ্যাত স্থানে যেতে পারেন, সূর্যলঙ্কা বীচ।
সূর্যলঙ্কা বীচঃ ( Suryalanka Beach) এটি বাপ্তালা ( Bapatla, formerly known as Bhavapuri, Bhavapatla) থেকে ৭কিমি দূরে। সমুদ্রের ধারে একেবারে সৈকতের উপর
সারি বাঁধা কটেজ।একরাত কাটাতে খুব ভালো লাগবে। পরদিন সমুদ্র স্নান করে কাছাকাছি
বেড়িয়ে ফিরে চলুন হায়দ্রাবাদ অথবা গুন্তুর।
এই ভ্রমন সার্কিট টি স্বয়ং সম্পূর্ণ ভাবে যেতে
পারেন। অথবা অন্য কোন ভ্রমন সূচিতেও যুক্ত করতে পারেন। এই পথটিতে দুদিন লাগবে।
একটু আরাম করে ঘুরতে চাইলে তিনদিন ও নিতে পারেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে
বিশেষ কি ই বা আর দেখার আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই সূচি বাঁধা পথে ভ্রমনের নয়।
খাওয়াঃ সর্বত্রই ভাল ব্যাবস্থা। হিন্দু হোটেল গুলি
মুলতঃ নিরামিষ। শহর গুলিতে প্রচুর পরিচ্ছন্ন মুসলিম হোটেল আছে, যেখানে আমিষ খাবার
পাওয়া যায়। আমরা পশ্চিমবঙ্গে বসে অন্ধ্রের মাছ খাই বলে মৎস্য প্রিয় বাঙ্গালি
ভ্রামনিকের মাছ খাওয়ার বাসনা না রাখাই ভালো। আর একটা কথা, আমরা এখানে যে বিরিয়ানি
খাই তা লখনউ ঘরানার। হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির স্বাদ কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। ছোটো
এলাকা গুলিতে স্থানীয় হোটেলে নিরামিষ অন্ধ্র থালি খেতে পারেন। একটু টকের আধিক্য
আছে। কিন্তু নিরাপদ। এমনিতেও স্থানীয় খাবারে কখনও শরীর খারাপের ভয় থাকেনা আর স্বাদ
বদলও হয়।
কেনাকাটাঃ রাজ্য
সরকারের হস্ত শিল্প কেন্দ্র লেপাক্ষি। এখানে কিনতে পারেন। এছাড়া স্থানীয় দোকানে কন্ডা
পল্লী কাঠের পুতুল, সুতি শাড়ি, কাঁচের চুড়ি ইত্যদি কেনা যায়।
khub valolaglo lekha ti...anek tathya pelam..Andhra beranor ichche r o bere gelo..
ReplyDelete