এক শ্রাবন দিনে ম্যাসাঞ্জোড়
আমি, আমার
বোন, আমার ভূতত্ববিদ বন্ধু, মানে এক কথায় পুরো পাগলের দলটা মাস দু/তিন গেলেই
অস্থির হয়ে উঠি বেড়িয়ে পড়ার জন্য। বর্ষাকাল। কোথায় যাব ঠিক করাই মুশকিল। ADA বোনের দৌলতে ম্যাসাঞ্জোড়
এ পঃবঃ
সরকারের যুব দপ্তরের গেস্ট হাউসে
ঘর পাওয়া গেল। ছুটির দিন নয় তাই রক্ষা
অবশ্য।
অফিসে ছুটি নিয়ে সকাল বেলা সবাই সপরিবারে বেরিয়ে পড়লাম।
রাস্তায় একটা ছোট
সোঁতার ধারে কাশের সদ্য নতুন শিষ ধরা ঝোপ কে পাশে রেখে একটু পরিষ্কার জায়গা দেখে
সাথে আনা কাগজ পেতে বসে টিফিন বক্স খোলা হল। ঝাল ঝাল আলুর দম আর (ঠাণ্ডা) কচুরি
দিয়ে সুন্দর ব্রেকফাস্ট হল। খানিক বাদে রাস্তায় আবার দাঁড়িয়ে একটা ছোট গুমটি দোকানে
গরম চা খাওয়া হল।
মন
ভোলানো পথ
|
ওখানেই লোক আছে, যা বলা হবে
খরচ নিয়ে রান্না করে দেবে। দুপুরে একপশলা বৃষ্টি গরমকে পাহাড়ের ওধারে পাঠিয়ে
দিয়েছে। বিকেলে ড্যামের ধারে গিয়ে প্রচুর ছবিতোলা, ছোটদের ছুটোছুটি সবই হল। একজন
হাতজাল দিয়ে অনেক দূরে মাছ ধরছিল। আমরা দুই মৎস্য লোভী বন্ধু দলছুট হয়ে (এবং আলাদা
হয়েও) গল্প করতে করতে গুটিগুটি পায়ে সেদিকে রওনা দিলাম। ফেরার সময় টাটকা
চুনোপুঁটি, ছোট লাল বাটা, ট্যাংরা মাছের প্যাকেট হাতে ঝুলিয়ে দলে ফিরলাম এবং
প্রত্যাশা মতই মাংসাশী বাকি সদস্যদের মুখ ঝামটা খেলাম। মেঘ আকাশকে কালো স্লেটের রঙ
দিয়েছে। তাই ফেরার পালা।
কফি আর মটর ডালের লঙ্কা
পেঁয়াজ দেওয়া গরম বড়া নিয়ে সবাই বসলাম ডাইনিং হলে। খাদ্যরসিক বরেরা – গরম বড়া ভালই লাগছে, তবে বাড়ির মত নয়। আমরা এই
সুযোগকে লুফে নিয়ে নিজেদের কাজে লাগালাম –
যাক তালে স্বীকার করলে যে বাড়িতে আমরা তোমাদের ভালই খাওয়াই। (যদিও রহস্যটা
ভাঙলাম না। এখানকার রাঁধুনি তো আর ডাল ভিজিয়ে বেঁটে করে দেবেনা, তার বদলে আমাদের
নির্দেশমতো বেসন দিয়ে কাজ সেরেছে )। প্রচুর আড্ডা, গল্প, গানের লড়াই ভিতরে আর
প্রবল বৃষ্টি বাইরে।
মাঝে গরম খিচুড়ি, ওমলেট আর
কিনে আনা টাটকা মাছভাজা জমিয়ে খাওয়া হল। জনান্তিকে বলে রাখি বরষায় গেলে টাটকা মাছ
প্রচুর পাবেন ঠিকই তবে রান্নার ঠাকুরকে তোষামোদের কৌশলটাও জেনে রাখতে হবে।
Massanjore Dam |
ছোটরা সারাদিনের দস্যিপনায়
ক্লান্ত হয়ে এখন ঘুমের দেশে। যদিও ঘড়িতে মাত্র নটা পাঁচ। আড্ডা চলছে। হাতফোনের
পরদায় জয় গোস্বামী (?) ভেসে এলেন এক রবীন্দ্র অনু্রাগি বন্ধুর হাতফোনের কল্যানে, "এক
ফাগুনে বৃষ্টি আসে/ বৃষ্টি এসে ঢাকে কেয়াবন/ মনে নেই! আজ বাইশে শ্রাবন?" মনে
পড়ল শহরের বুকে আজ অনুষ্ঠান। বন্ধুকে ফোনে ধরলাম। বললাম বেড়াতে এসেছি। তাই
অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে অনাকাঙ্ক্ষিত অনুপস্থিতি। শহুরে আমিকে আধাশহুরে আমি তিরস্কার
করল, কেন? পরিস্কার করে বললেই পারতে, সবাই মিলে বেড়ানোর আনন্দে দিনটা ভুলে
গেছিলে! রবীন্দ্র বোদ্ধার ইমেজে চিড় ধরত? চোখ বুজলাম। মাথা হেলিয়ে দিলাম সোফায়। আর ঠিক
তখনই পাগল আমিটা আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলল -
"যে মন -
কালো মেঘে আলোর রেখা চায় -
রবি বুঝি জানে তার মন।
‘ছোটোনদী’ পেরিয়ে ‘অরূপরতন’
রবি তো আছে! অনুক্ষণ;
তাই ভুলে গেছি –
আজ ২২শে শ্রাবন।"
যাবেন কিভাবেঃ- সাথে নিজস্ব গাড়ী না থাকলে সিউড়ী থেকে গাড়ী ভাড়া নিয়ে বা বাসে ৪০ কিমি। একই ভাবে শান্তিনিকেতন (বোলপুর) থেকে ৭৭ কিমি; সাঁইথিয়া থেকে ৫০ কিমি; রামপুরহাট থেকে ৬০ কিমি।
দ্রষ্টব্যঃ মাসাঞ্জোড় ড্যাম (Massanjore Dam)। আসেপাশের পাহাড়। কাছাকাছি সময়
থাকলে ও গাড়ির সুবিধা থাকলে আরও কিছু জায়গায় যাওয়া যায়। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়
গেলে ড্যামের জলে নৌকা চেপে ঘুরতে পারেন স্থানীয় লোকদের সাথে যোগাযোগ করে। কাছেই লাম্পা
নামে একটা আদিবাসী জনবসতি আছে যেখানে কিছু হস্তশিল্পের কেনাকাটা হয়।
বুকিং ও ঘরভাড়াঃ যুব কল্যান কেন্দ্র, ৩২/১,
বি বা দী বাগ (দঃ), কোলকাতা – ১, দূরভাষঃ ০৩৩-২২৪৮০৬২৬।
[যদিও ফোনে পাওয়া মুশকিল, বুকিং পাওয়া আরও বেশি কঠিন। সরকারি স্তরে চেষ্টা করলে
একটু সহজ হয়।] ভাড়া নামমাত্র। প্রত বেড হিসেবে ভাড়া। পুরো ঘর নিতে হলে ৪টে বেডের
ভাড়াই দিতে হবে।
এছাড়াও আর একটি খুব
সুন্দর সরকারি থাকার জায়গা হল
ময়ূরাক্ষী ভবন। বুকিং- জলসম্পদ উন্নয়ন ভবন,
ইরিগেশন বিভাগ, সল্ট লেক, ফোনঃ ০৩৩-২৩২১২২৫৯। ঘরভাড়া মোটামুটি ১০০ টাকা। সামান্য
কিছু প্রাইভেট হোটেল আছে। তবে খুব ভাল কিছু নেই। খাবার হোটেল ও আছে খুবই ছোটখাটো।
খাওয়াদাওয়াঃ- ওখানেই খেতে হবে।
কখন যাবেনঃ- সারা বছরই যাওয়া যায়।
swagata,
ReplyDeleteapnar ei lekhaTi aamader kaagoj Sokal Sokal er jonyo nitey paari?? aboshyoi aapnar naam diye chhapano habe.. plz mail me at paromita9@gmail.com