অনন্য কুমায়ূন – অসাধারণ হানিমুন
পঙ্কজ হাজরা ও সুমনা হাজরা রক্ষিত
প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতির এই রঙ বদলের বহুরূপী খেলা কোনদিন যে দেখতে পাব ভাবিনি। বর্ধমান স্টেশন- এর রিজার্ভেসনের লম্বা লাইনে তখন জানিনা যাত্রা নিশ্চিত কিনা। ২০১১ সালেরএপ্রিল মাসে যাত্রা স্থির হলেও টিকিট কাটাই হল প্রায় দুমাস আগে এবং শুরু হল হোটেল বুক করার জন্য নির্ভরযোগ্য সংস্থার খোঁজ। উত্তরাখণ্ড সরকারের কুমায়ূন মণ্ডল বিকাশ নিগম লিমিটেড (Kumayon Mandal Vikash Nigam Ltd.) এর বিশ্বাসযোগ্যাতায় ভর করে হোটেল বুকিং সাঙ্গ হল। ভ্রমনের আনন্দ যাতে নিরানন্দ না হয়ে যায় সে জন্য আমাদের নৈনিতাল (Nainital) ও কৌশানি (Koushani) যাত্রার পরিকল্পনা করা হল রাজধানীর পথ ধরে। হ্যাঁ, পণ্ডিতদের পরামর্শ উপেক্ষা করে লক্ষ্ণৌ এর পথ না ধরে দিল্লীর পথই ধরলাম। বর্ধমান স্টেশন থেকে পূর্বা এক্সপ্রেসের side upper & lower সিট দুটি এই দম্পতির অস্থায়ী সংসারে পরিণত হল। কচিকাঁচাদের শিশুসুলভ আচার আচরণ দেখতে দেখতে কখন যে পাটনা-মুগলসরাই পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। রেলকোচের মৃদু আলোয় কিছুটা ম্যাগাজিন পড়া ও কিছুটা গান শোনায় যাত্রা ক্লান্তি দূর হল। দুপুরের অভুক্ত বাড়ীর তৈরি ফ্রায়েড রাইস ও চিলি চিকেন দিয়ে আমরা আমাদের রাত্রের আহার সাঙ্গ করলাম। আস্বাভাবিক কোনো উপদ্রব ছাড়াই ঘুম ভাঙ্গল আলিগঢ় স্টেশনে। নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট পরে দিল্লী স্টেশনে পৌঁছে পুরানো দিল্লীর নির্ধারিত হোটেলে আমরা উঠলাম। সেখানে সারাদিন বিশ্রাম নিয়ে ট্রেন যাত্রার ক্লান্তি দূর করে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হল রাত ১০-টায়। রানিক্ষেত এক্সপ্রেসে সময়ের স্বল্পতার কারনে সংসার পাতা সম্ভব হল না । সঠিক সময়ে কাকভোরে কাঠগোদাম স্টেশনে পৌঁছে শুরু হল এক অদ্ভুত ভাল লাগা। চতুর্দিকে ছোট ছোট পাহাড় পরিবৃত উত্তরাখন্ডের এই সাজানো গোছানো স্টেশন ও তার মনোরম আবহাওয়া মুগ্ধ করে দেবার মতন। সুর্যরশ্মির পৃথিবীতে আগমন ও আমাদের নৈনিতাল যাত্রা তালে তাল মিলিয়ে চলতে লাগল। খোঁপার কাঁটার অনুরূপ বাঁকের রোমাঞ্চ এবং একদিকের গভীর খাদের অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে অবশেষে আমরা নৈনিতাল পৌঁছালাম। হোটেলে চেক-ইন এর সময় দুপুর বারোটা হলেও ম্যানেজারের এর সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতায় সকাল সাড়ে ছ-টায় আমরা রুম পেয়ে গেলাম। একটি রাতের ব্যবধানে আবহাওয়ার আমূল পারিবর্তনে স্বভাবতই মনটা ভরে গেল। ঠাণ্ডায় প্রায় থরহরি কম্পমান হয়ে বেরিয়ে পড়লাম প্রকৃতি দর্শনে।